মলদ্বারে ফিস্টুলা

ডাক্তার

মলদ্বারে ফিস্টুলা (এনাল ফিস্টুলা) এক ধরনের পায়ুপথের রোগ। মলদ্বারের আশেপাশের চামড়ায় কখনো কখনো জীবাণুর সংক্রমণে ইনফেকশন বা ফোঁড়া হতে পারে। অনেক সময় এসব ফোঁড়া থেকে পুঁজ বের হয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা পায়ুপথের সাথে একধরণের রাস্তা তৈরি করে। ফোঁড়া বা অন্য কোনো কারণে মলদ্বার ছাড়া পায়ুপথের সাথে এই ধরণের অস্বাভাবিক রাস্তা তৈরি হলে সেটিকে এনাল ফিস্টুলা বা মলদ্বারের ফিস্টুলা বলে। অনেকের কাছে এটি ভগন্দর নামেও পরিচিত।

এধরণের ফিস্টুলা বা ভগন্দর হলে মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া সহ নানান রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই ফিস্টুলাগুলো সাধারণত চিকিৎসা ছাড়া নিজে থেকে ভালো হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফিস্টুলা সারাতে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুন: যোনিতে ইনফেকশন হলে করণীয়

এনাল ফিস্টুলার লক্ষণ

মলদ্বারের ফিস্টুলা বা ভগন্দর হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন –

অনেক ক্ষেত্রে মলদ্বারের আশেপাশের চামড়ায় ছিদ্রের মত ফিস্টুলার রাস্তাটি বাহির থেকে দেখা যেতে পারে। তবে সাধারণত রোগীর নিজের পক্ষে এটি দেখা কষ্টকর।

এনাল ফিস্টুলা হওয়ার কারণ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মলদ্বারের আশেপাশের ফোঁড়া থেকে ফিস্টুলা তৈরি হয়। সাধারণত পুঁজ বের হয়ে যাওয়ার পরে ফোঁড়াটি ঠিকমতো না শুকালে এমনটা হয়।

এছাড়া আরও কিছু কারণে এনাল ফিস্টুলা হতে পারে। যেমন –

টিবি (যক্ষ্মা) / এইচআইভি (এইডস): এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এনাল ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে।

মলদ্বারের অপারেশন: পায়খানার ছিদ্রপথের আশেপাশে কোনো অপারেশন হয়ে থাকলে এরপর সেখান থেকে নতুন রাস্তা তৈরি হয়ে মলদ্বারে ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে৷

ক্রন’স ডিজিজ: এটি একধরনের অসুখ যেখানে পরিপাক নালীতে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। এতে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা হওয়া কিংবা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া সহ নানান লক্ষণ দেখা দেয়।

ডাইভারটিকুলাইটিস: এই অসুখটি হলে পরিপাক নালীর শেষ অংশ (বৃহদান্ত্রের) গায়ে কিছু অংশ ফুলে থলির মত হয়ে যায় ও সেখানে ইনফেকশন হয়।

হাইড্রাডেনাইটিস সাপুরাটিভা: এটি এক ধরনের অসুখ যেখানে শরীরের যে অংশগুলোতে ঘাম বেশি হয় সেখানের চামড়ায় ফোঁড়া হয় এবং চামড়া মোটা হয়ে দাগের মত হয়ে যায়।

এনাল ফিস্টুলা হলে করণীয়

এনাল ফিস্টুলার লক্ষণগুলো অনেকদিন ধরে থাকলে দেরি না করে ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইবেন। এছাড়া নাড়িভুঁড়ি বা পেটে অন্য কোনো ধরণের সমস্যা আছে কি না তাও জানতে চাইবেন।

এ সময় ডাক্তার প্রয়োজনে মলদ্বারের আশেপাশের জায়গাটি পরীক্ষা করে দেখবেন। ফিস্টুলার অবস্থা বুঝার জন্য প্রয়োজনে মলদ্বার দিয়ে আলতোভাবে এক আঙুল প্রবেশ করিয়েও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এই পদ্ধতিকে ডিআরই (ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশন) বলা হয়।

পরীক্ষা করে এনাল ফিস্টুলা আছে এমন মনে হলে ডাক্তার প্রয়োজনে রোগীকে এই রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (কোলোরেক্টাল সার্জন) এর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিবেন।  বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফিস্টুলা সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা অথবা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিবেন।

এক্ষেত্রে যে পরীক্ষাগুলো করা হতে পারে সেগুলো হলো –

আরও পড়ুন: সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি হয় কি

মলদ্বারে ফিস্টুলার চিকিৎসা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনাল ফিস্টুলার চিকিৎসা হিসেবে অপারেশন করা হয়। কারণ সাধারণত মলদ্বারে ফিস্টুলা অপারেশন ছাড়া পুরোপুরি ভালো হয় না। এক্ষেত্রে যেসব অপারেশন করা হতে পারে সেগুলো হলো –

ফিস্টুলোটোমি: এই পদ্ধতিতে পুরো ফিস্টুলার নালী বা রাস্তাটিকে কেটে বাকি পুঁজগুলো বের করে দেয়া হয়। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী সেলাই করে কিংবা সেলাই ছাড়া এটিকে শুকাতে দেয়া হয়। শুকানোর পর জায়গাটা আগের মত সুস্থ হয়ে যায়৷

সেটন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে ফিস্টুলার ভেতরে কয়েক সপ্তাহের জন্য সেটন নামক এক ধরণের বিশেষ সুতা ঢুকিয়ে রাখা হয়। এই সুতা পুঁজগুলো শুষে নিয়ে ফিস্টুলা শুকাতে সহায়তা করে। এরপর আরও কয়েক ধাপে ফিস্টুলাটি পুরোপুরি সারিয়ে তোলা হয়৷

অ্যাডভান্সমেন্ট এনাল ফ্ল্যাপ: এই পদ্ধতিতে শরীরের অন্য একটি অংশ থেকে (সাধারণত পায়ুপথের শেষভাগ থেকে) এক টুকরো টিস্যু বা মাংস এনে ফিস্টুলার রাস্তাটিতে যোগ করা হয়। এভাবে নতুন অংশ যোগ করলে ফিস্টুলাতে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে এটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় ও ফিস্টুলার পুরো রাস্তাটি কেটে ফেলার আর প্রয়োজন হয় না।

লিফট পদ্ধতি: পায়খানার রাস্তায় যেসব মাংসপেশি পায়খানার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে সেসব পেশির ভেতরে কোনো ফিস্টুলা হলে সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ এ পদ্ধতিতে পেশিগুলো না কেটে শুধু ফিস্টুলাটি সরানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এসকল পদ্ধতি ছাড়াও আজকাল লেজার, ফাইব্রিন গ্লু এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে সরাসরি অপারেশন ছাড়াও এনাল ফিস্টুলার চিকিৎসা করা হয়। ফিস্টুলার চিকিৎসার পরে সাধারণত সারাদিন হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের পর কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার দরকার হতে পারে।

ফিস্টুলার চিকিৎসার সবগুলো পদ্ধতিতেই কিছু সুবিধা ও কিছু অসুবিধা রয়েছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ডাক্তার রোগীর জন্য যেই পদ্ধতিটি ভালো হবে সেটি বেছে নিবেন।

এনাল ফিস্টুলা অপারেশন করার পর সাধারণত যেসব অসুবিধা দেখা দিতে পারে

এনাল ফিস্টুলার অপারেশনের পর সাধারণত যেসব অসুবিধা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো –

এ সমস্যাগুলো কতটা জটিল হতে পারে তা সাধারণত ফিস্টুলাটি কোথায় হয়েছে এবং কোন পদ্ধতিতে এটির চিকিৎসা করা হচ্ছে সেটির উপর নির্ভর করে।

যদি এনাল ফিস্টুলার লক্ষণগুলো অনেকদিন ধরে থাকে তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। পায়ুপথের ফিস্টুলা যেহেতু জটিল একটি রোগ, তাই বিশেষজ্ঞ কলোরেক্টাল চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও দ্বারা পায়ুপথের ফিস্টুলা চিকিৎসা কোনো অবস্থাতেই করাবেন না।

সামিয়া আফরিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

আরও পড়ুন: ভ্যাজাইনাল ইচিং কেন হয়

ডেস্কটপ ভিউ দেখুন